অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জয়পুরহাটে গুলিতে নিহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য নেপাল দাসের ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মেগচামী এলাকার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের সদস্য ও স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার বাতাস।
কোনও সান্ত্বনাই থামাতে পারছে না স্ত্রী অঞ্জনা দাসের কান্না। নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে পাঁচ বছর বয়সী সন্তান অর্ণব দাস। বাবা যে আর কোনও দিন ফিরবে না সেটি পুরোপুরি না বুঝলেও স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে আছে তার মনও।
ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মেগচামী ইউনিয়নের কলাগাছি দাসপাড়ার নারায়ণ চন্দ্র দাস ও কানন বালা দাসের মেজো ছেলে হলেন এই নেপাল দাস (৩৫)। তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ২০ ব্যাটালিয়নে জয়পুরহাটে সৈনিক পদে কর্মরত ছিলেন। ছুটি কাটিয়ে গত ১৫ নভেম্বর বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যান তিনি। নেপাল দাসের বড় ভাই গোপাল দাস বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকে চাকরি করেন ও ছোট ভাই বাদল দাস সেনাবাহিনীর গাড়ি চালক।
নেপালের চাচাতো ভাই দেবাশিষ দাস জানান, নেপাল ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল চাকরিতে যোগ দেন। সাত বছর আগে পাংশা উপজেলার বাগদুল গ্রামে বিয়ে করেন এবং পাঁচ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। নেপালের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে নিয়ে আসছে।
মেগচামী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাবির উদ্দিন শেখ বলেন, সকালে জয়পুরহাটের বিজিবি ক্যাম্পের অধিনায়ক পরিচয়ে আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, আপনার ইউনিয়নের কলাগাছি গ্রামের নেপাল মারা গেছে। সে সংবাদটি আমি নেপালের বাড়িতে পৌঁছে দেই।
জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ নেপাল দাসকে বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেজিস্টারে নিহত নেপাল দাসের ঠিকানা ‘২০ বিজিবি, জয়পুরহাট’ লেখা রয়েছে।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিজিবি সদস্যরা মর্গে লাশ রেখে পাহারা দিচ্ছেন। এর কিছুক্ষণ পর ময়নাতদন্ত শেষে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যান তারা। এ সময় বিজিবি সদস্যরা জানান, সকাল ১০টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি জানানো হবে। কিন্তু এ ঘটনায় পরে আর কোনও প্রেস ব্রিফিং হয়নি। আর নেপাল দাস কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সে বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক নুরুন্নবী বাদী হয়ে জয়পুরহাট সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (ইউডি) করেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ জয়পুরহাট-২০ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এদিকে, বিকাল ৪টা পর্যন্ত নেপালের লাশ তার মধুখালীর বাড়িতে পৌঁছায়নি।
Leave a Reply